বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৫৬ পূর্বাহ্ন
রুহুল আমীন খন্দকার- বিশেষ প্রতিনিধিঃ
র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকেই দেশের সার্বিক আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে সব ধরণের অপরাধীকে আইনের আওতায় নিয়ে আসার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। র্যাব নিয়মিত জঙ্গী, সন্ত্রাসী, সংঘবদ্ধ অপরাধী, মাদক, অস্ত্রধারী অপরাধী, পর্নোগ্রাফি, ভেজাল পণ্য, ছিনতাইকারী, মাদকসেবী, ধর্ষণ, মানব পাচারকারীসহ ধর্ষণ ও হত্যা মামলার আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে আসছে।
এরই ধারাবাহিকতায় সিপিসি-২, নাটোর র্যাব-৫ এর চলমান অভিযানে নাটোরে ক্লুলেস হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন এবং আলামতসহ ২৪ ঘন্টার মধ্যে আসামীদের গ্রেফতার করা হয়েছে। আসামীদের গ্রেফতারের বিষয়টি আজ মঙ্গলবার ১৯শে এপ্রিল ২০২২২ইং একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই গণমাধ্যম কর্মীকে নিশ্চিত করেছেন।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতিটি নিম্নে হুবুহু তুলে ধরা হলোঃ
১। গত ১৬ই এপ্রিল শনিবার রাত অনুমান ১১ঃ০০ ঘটিকায় গুরুদাসপুর থানা পুলিশ নাটোর জেলার গুরুদাসপুর থানার ধারাবারিষা ইউনিয়নের উদবারিয়া দাখিল মাদ্রাসার চত্ত্বর হতে অজ্ঞাত যুবক (বয়স অনুমান ২০ বছর) এর লাশ উদ্ধার করেছিল। প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হয় কে বা কাহারা অজ্ঞাত যুবক কে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে ফেলে পালিয়ে যায়।
গুরুদাসপুর থানা পুলিশ অজ্ঞাত লাশের সনাক্তের প্রচেষ্টা হিসেবে লাশের ছবি পাশ্ববর্তী পাবনা জেলার চাটমোহর থানার বিট অফিসারে নিকট পাঠালে বিট অফিসার উক্ত ব্যক্তির পরিচয় সনাক্ত করে এবং মৃত ব্যক্তির নাম অন্তর(২০), পিতা- মোঃ ছবের আলী, সাং- পাতাইলহাট, থানা- চাটমোহর, জেলা পাবনা বলে জানা যায়। অনুসন্ধানে জানা যায়, অনেক আগে মৃত অন্তর (২০) এর পিতা-মাতার বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটেছে। সে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কাজ করত এবং তার নিজ পরিবারের সাথে তেমন যোগাযোগ ছিল না।
২। গুরুদাসপুরে উদবাড়ীয়া মাদ্রাসার বারান্দায় অজ্ঞাত যুবকের লাশ প্রাপ্তির সংবাদটি এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে এবং স্থানীয় ও জাতীয় সংবাদ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হলে র্যাব-৫, নাটোর ক্যাম্প ঘটনাস্থল পরিদর্শনসহ হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটনের ছায়াতদন্ত শুরু করে।
৩। র্যাব-৫, সিপিসি-২, নাটোর ক্যাম্পের একটি আভিযানিক দল কোম্পানী অধিনায়ক অতিঃ পুলিশ সুপার মোঃ ফরহাদ হোসেন এবং কোম্পানী উপ-অধিনায়ক মোঃ রফিকুল ইসলাম এর নেতৃত্বেতথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় উক্ত অজ্ঞাত যুবক হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয়। অদ্য ১৮/০৪/২০২২ইং খ্রিঃ তারিখ সময় ১০ঃ০০ ঘটিকা হতে ১৯/০৪/২০২২ইং তারিখ ভোর ০৫ঃ০০ ঘটিকা পর্যন্ত র্যাব-৫, সিপিসি-২, নাটোর ক্যাম্পের আভিযানিক দল চাটমোহর ও
সিরাজগঞ্জ জেলায় অভিযান চালিয়ে অন্তর(২০) হত্যাকান্ডের সাথে সরাসরি জড়িত আসামিদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হন।
অভিযানে গ্রেফতারকৃত আসামীরা হলো- ১। মোঃ এরশাদ আলী@ আকাশ সুইপার(৩৪), পিতা- মৃত তাছের উদ্দিন, সাং গোপালবাটি, থানা- আত্রাই ও জেলা- নওগাঁ, বর্তমান ঠিকানা গুয়াখাড়া বাজার, মহেলা স্টেশন, চাটমোহর পাবনা ও ২। মোঃ রিপন সরকার (৩২), পিতা- আকবর সরকার, সাং- পাটচাটরা, চাটমোহরদ্বয়কে গুয়াখাড়া স্টেশন বাজার হতে ১৯/০৪/২০২২ইং তারিখ ০২ঃ০০ ঘটিকায় আটক এবং হত্যাকান্ডের সময় ব্যবহৃত (ক) মোবাইল- ২টি, (খ) সীমকার্ড- ০৪ টি, (গ) মেমোরীকাড- ১টি উদ্ধারমূলে জব্দ করা হয়।
৪। আটককৃত আসামী ১। মোঃ এরশাদ আলী@ আকাশ সুইপার (৩৪) ও ২। রিপন সরকার(৩২) কে হত্যাকান্ড
সম্পর্কেপৃথকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলে স্বাক্ষীদের সম্মুখে তারা অন্তর(২০) কে হত্যা করার কথা স্বীকার করে। পরবর্তী তাদের উদবাড়ীয়া মাদ্রাসায় (ঘটনাস্থল) উপস্থিত করা হলে আসামীদ্বয় হত্যাকান্ডের পূর্নাঙ্গ বর্ণনা দেন এবং আসামীদের দেখানো মতে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া রেলওয়ে ষ্টেশনের প্লাটফর্মের পূর্বকোণ হতে আসামী এরশাদ এর দেখানো মতে অন্তর(২০) এর পরিধেয় কালো শার্টসহ পরিছন্নতার কাজে ব্যবহৃত দুটি টিনের বালতি উদ্ধার করা হয়
৫। আসামীদ্বয়ের ভাষ্যমতে- আসামী ১। মোঃ এরশাদ আলী আকাশ সুইপার(৩৪) ও ২। রিপন সরকার(৩২) মহেলা বাজার রেলওয়ে ষ্টেশন চাটমোহর এলাকায় একসাথে বসবাস করত। সেই সুবাদে ভিকটিম অন্তর(২০) এর সাথে পরিচয় হয়। মূলত রিপন সরকার বাজারে জিলাপির ব্যবসা করলেও এর আড়ালে গোপনে মাদকের ব্যবসা করত। মৃত অন্তর(২০), রিপন সরকার ও মোঃ এরশাদ আলী@ আকাশ সুইপার(৩৪) মাদক সেবনে অভ্যস্থছিল।
আসামী এরশাদের ভাষ্যমতে- রিপনের সাথে ভিকটিম অন্তরের মাদক নিয়ে দন্দ্বের সৃষ্টি হয়। ফলে আসামী রিপন ঘটনার দিন শনিবার ১৬/০৪/২০২২ইং তারিখে ভোর অনুমান ০৫:৩০ ঘটিকার সময় অন্তর(২০) কে আসামী এরশাদের ব্যবহৃত ফোন দিয়ে ফোন দেয় এবং কাজ আছে বলে জানায়। পরবতর্ীতে অন্তর(২০) বিকাল অনুমান ১৫ঃ৩০ ঘটিকায় সময় চাটমোহর বাজারে রিপন এবং এরশাদের সাথে দেখা করে এবং তারা একটি জায়গা হতে চারটি বোতলে অনুমান চার লিটার চোলাইমদ সংগ্রহ করে।
রিপন ও এরশাদ কৌশলে অন্তরের মদের বোতলে ঘুমের ঔষধ মিশ্রিত করে এবং পরবর্তীতে তারা তিনজন সিএনজি নিয়ে বিকাল অনুমান ১৭ঃ৩০ ঘটিকায় গুরুদাসপুর থানার উদয়বাড়ীয়া ধারাবারিষা এলাকায় আসে এবং ঘোরাঘুরি করে। রাত অনুমান ২০ঃ০০ ঘটিকায় তারা তিনজন উদয়বাড়ীয়া মাদ্রাসার বারান্দায় পলিথিন বিছিয়ে এবং মশার কয়েল জ্বালিয়ে তাদের কাছে থাকা চোলাইমদ চার বোতল সেবন করে।
চোলাইমদ সেবনের পর অন্তর(২০) অচেতন হয়ে পড়লে এরশাদ ও রিপন তাদের পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী অন্তরের পরিধেয় শার্টটি খুলে দুইজন দুইদিক থেকে অন্তর এর গলায় পেচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর এরশাদ ভিকটিমের শার্ট তার বালতিতে করে উল্লাপাড়া সিরাজগঞ্জ এবং রিপন তার নিজ বাড়ী চাটমোহর চলে যায়।
উপরোক্ত ঘটনায় আসামীদ্বয়কে নাটোর জেলার গুরুদাসপুর থানায় হস্থান্তর করার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
৬। পরিশেষে, আমি সকল প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং সাংবাদিক ভাইদের আশ্বস্থ করতে চাই যে আমাদের দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় জঙ্গিবাদ দমন, সংঘবদ্ধ অপরাধীদের